এখন থেকে চুইয়ের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বছরজুড়ে সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা
প্রাকৃতিক ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ চুইঝাল। এর অনন্য গন্ধ রান্নায় আনে আলাদা আমেজ। বিশেষ করে মাংস রান্নায় এর সংযোজন আনে অপূর্ব এক ঝাল ঝাল স্বাদের। অনেকে তো মাংস রেখে শুধু চুইঝালই খান আয়েশ করে। স্বাদের পাশাপাশি এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। চুই ঝালের পাতা, কাণ্ড, শেকড়, ফুল, ফল, ডাল সবই ঔষধি গুণসম্পন্ন।
এসব কারণে চুইয়ের ব্যবহার বাড়ছে দিনদিন। সাধারণত এটি লতা আকারে বাজারে পাওয়া যায়। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য এর একটি নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। গুড়া মশলা আকারে চুইঝাল বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি।
চুইঝাল একটি ঔষধিগুণ সম্পন্ন লতানো উদ্ভিদ। চই, চুই কিংবা চুইঝাল নাম পরিচিত লতা জাতীয় এ গাছটি দেখতে অনেকটা পানগাছের মতো। অন্য গাছের আশ্রয়ে এরা বেড়ে ওঠে। মশলা হিসেব এর শাখা, শেকড় উভয়ই ব্যবহার করা হয় এবং পাতাও ব্যবহার করা হয় শুকিয়ে। তবে শাখার চেয়ে শেকড়ের ঝাল বেশি। মাংসে স্বাদ বাড়ানোর জন্য এর প্রচলন দীর্ঘদিনের।
এর আধুনিক চাষাবাদে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিকের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। এবার তিনি শুরু করেছেন চুই এর গুড়া তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে তার চুইগুড়ার ব্যবহার শুরু হয়েছে। প্রশংসাও পেয়েছেন ক্রেতাদের।
কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক জানান, কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়াশোনা শেষ করে, চাকরি না করে কৃষি কাজ শুরু করি। আমার শুরু করা চুইয়ের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি দেশব্যাপী সাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে আমি এ কাজ শুরু করি।
গুড়া তৈরির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দূরাঞ্চল বা দেশের বাইরে থেকে কেউ এটি চাইলে দেওয়া মুশকিল হয়ে যায়। পরিবহনে অনেক সময় দেরি হয়। কয়েকদিন রেখে দিলে এটি আবার শুকিয়ে যায়। তখন আর পুরো স্বাদ থাকে না। তাই এ উদ্যোগ।
এরফলে চুইয়ের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বছরজুড়ে সংরক্ষণ করা যাবে বলেও মনে করেন এই কৃষক।
এবিষয়ে ডুমুরিয়া উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, চুই একটি দামি ফসল। মাংসসহ সব ধরনের তরকারির সঙ্গে মসলা হিসেবে এটি খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ঔষধিগুণ সম্পন্ন মশলা। সংরক্ষণকালের স্থায়ীত্ব বাড়াতে পাউডার করা হচ্ছে। এই পাউডারের গুণাগুণও লতার মতোই। এর সম্প্রসারণে আমরা কাজ করছি।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, মাংসের সঙ্গে মশলা হিসেবে চুই বেশি পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভর্তা, আচারসহ নানা মুখরোচক খাবার হিসেবে এর ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে গুড়া আকারে এর বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। এটি ভাল উদ্যোগ। এরফলে দেশের বাইরেও এর ব্যবহার বেড়ে যাবে।