Skip to content

পানি কচু চাষেই লাখপতি খুলনার নিউটন মন্ডল

  • by

পানি কচু চাষেই লাখপতি খুলনার নিউটন মন্ডলখুলনা থেকে মো. রমজান শেখ : নিউটন মন্ডল,খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চর মাদারডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। পানি কচু চাষের মাধ্যমে অভাবনীয় সাফল্য এবং বেকারদের জন্য সাবলম্বী হওয়ার কার্যকরী এক দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন তিনি। খুলনার বাজারে কচু সরবরাহ করার পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কোরিয়াতে সাফল্যের সাথে কচু রপ্তানি করছেন তিনি। চাষ পদ্ধতি সহজ এবং আমাদের দেশের মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন ব্যতিক্রমী এই পেশায়।

কর্মজীবনের শুরুতে খুলনার পাটকলে কাজ করতেন তিনি। দিনের টাকা দিনে ফুরিয়ে যেত এমন অবস্থায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচটাও ঠিকমতো বহন করতে পারতেন না নিউটন মন্ডল। এর সাথে পাটকলে কাজ করে শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় ভোগেন অনেকদিন। বউয়ের পরামর্শে ২০০৫ সালের দিকে নিজেদের এক টুকরা জমিতে পানি কচুর চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমবারেই অভাবনীয় সফলতা পান তিনি। বর্তমানে ৫০ শতক জমিতে কচু চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদন করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় চারার যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। নিউটন মন্ডলকে অনুকরণ করে এলাকার অনেকেই ঝুকছেন পানি কচু চাষের দিকে।

নিউটন জানান, “প্রথমে ধান চাষ দিয়ে শুরু করেছিলাম। এলাকার মাটি নুনতা(লবণাক্ত) হওয়ায় তেমন লাভ পাই না্ই।তারপর কচু চাষের সিদ্ধান্ত নেই। ৫০ শতক জমিতে আমি যদি ধান চাষ করতাম তাহলে ৬০ মনের মতো উৎপাদন হতো যার দাম ৫০,০০০ টাকার বেশি না।এর ভিতর খরচ বাদ দিলে আমার সীমিত কিছু লাভ থাকতো। একই জমিতে আমি পানি কচু চাষ করে বছরে ১,৫০,০০০ টাকার লতি, ৪০,০০০ টাকার কচুর ফুল, প্রতি পিচ ৫০-১০০ টাকা দরে ২,৫০,০০০ টাকার মতো কচু, ১,৫০,০০০ টাকার মতো চারা বিক্রি করি। পাশাপাশি কচুর ডগা শুকায়ে কোরিয়াতে রপ্তানি করে ভালো একটা অর্থ পাই। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৪,৫০,০০০-৫,০০,০০০ টাকা লাভ থাকে আমার।”

কচু চাষের মাধ্যমেই এলাকায় বনে গেছেন কচু নিউটন নামে,হয়েছেন দেশের তালিকাভুক্ত নামকরা কৃষকদের মধ্যে ১১ তম। নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার বলেন, “কচু চাষের শুরুর দিকে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। ওগুলোতে আমরা কান দেই নাই। আর এখন সেই কচুতে আমাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।গরুর খামার করেছি,সেখান থেকেও লাভবান হচ্ছি। ছেলেমেয়ে গুলোর লেখাপড়াও ঠিকমতো চলছে। কচুর ডগা এক হাত করে কেটে সেটা শুকায়ে আমরা কোরিয়াতে পাঠায় দিচ্ছি। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে।”

চাষ পদ্ধতি সম্বন্ধে নিউটন জানান, “ প্রথমে জমি তৈরি করতে হয়।এর জন্য ৭-৮ ইঞ্চি ডিপ করে চাষ দিতে হয়। তারপর জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট, খৈল, জৈব সার দিয়ে ১ সপ্তাহ পচাতে হয়। এরপর এখানে চারা রোপন করতে হয়। সপ্তাহে একদিন পানি সেচ দিতে হয় এবং চাষকালীন সময়ের মাঝামাঝি একবার আাগাছা পরিষ্কার করতে হয়। রোপন করার ৪৫ দিনের মাথায় কচুর লতি বিক্রি করা যায়। প্রতিটি কচু উচ্চতায় ছয়-নয় ফুট পর্যন্ত হয় এবং গড় ওজন ২০-৩০ কেজি হয়ে থাকে। চারা রোপনের উপযুক্ত সময় জানুয়ারি মাস। কোনো রোগবালাই হলে আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দেই। কচুর লতি থেকে নিজেই আলাদা জমিতে চারা উৎপাদন করি।”

নিউটনের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ এলাকার আর এক কচু চাষি সুবির হালদার বলেন, “নিউটন ভাইয়ের দেখা দেখে আমি ২০১৩ সাল থেকেই কচু চাষ করি। এখানের মাটি একটু লবণাক্ত হওয়ায় ধানের থেকে অনেকগুন বেশি লাভ পাই। সমস্যা দেখা দিলে নিউটন ভাই সাহায্য করেন আর বড় সমস্যা হলে মোসাদ্দেক স্যারতো আছেনই।”

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, নিরাপদ খাদ্যের সব নিয়ম মেনেই নিউটন কচু উৎপাদন করছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই উৎপাদিত কচুর গুনগত মান ভালো হওয়ায় কোরিয়ার বাজারেও নিউটনের কচু রপ্তানি হচ্ছে।সে একজন ভাল কৃষক। তাকে নিয়মিত আমরা মনিটরিং করছি। কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।দেশের তালিকাভুক্ত নামকরা কৃষকদের মাঝে নিউটন ১১ তম। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। চাষের সুযোগ থাকলে বেকারদের জন্য পানি কচুর চাষ বড় সফলতা এনে দিতে পারে তার জীবন্ত উদাহরণ নিউটন মন্ডল।”

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:৩২এএম/৬/৯/২০১৯ইং)

Source: https://www.dhakarnews24.com/2019/09/06/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%9A%E0%A7%81-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *